
টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলাস্থ জেলা শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তরে শিক্ষা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে জ্বাজল্যমান গালা গ্রামের অবস্থান। এই গ্রামের গালা কুইচবাড়ি রোডের পাশে অবস্থিত গালা গোরস্থান থেকে সোজা পশ্চিমে মরহুম নওশের আলী, অবসরপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের বসতভিটা। তারই সামনে ত্বদীয় কনিষ্ঠ পুত্র মোঃ নূরুজ্জাহীদ কচির প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংগঠন “নওশের আছিয়া ফাউন্ডেশন” এর ওয়াকফকৃত গালা মৌজার ৫৪১,৫৪২,৫৪৩ নং দাগের ৫৫ শতাংশ জমিতে ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের পারিবারিক সদস্য ও স্থানীয় মুসলমান জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত উদ্যোগ এবং আর্থিক সহায়তায় ২০২১ সাল হতে “বায়তুল আমান জামে মসজিদ কমপ্লেক্স ” নামে একটি মসজিদ নির্মানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
“নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ইমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত: আল্লাহ ব্যাতিত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” সূরা আত তাওবাহ- ১৮ নং আয়াত।
“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনূরুপ ঘর তৈরী করবেন।” সহীহ মুসলিম হাদীস- ১০৭৩ নম্বর।
আধ্যাত্মিক, মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের বাতিঘর এই মসজিদ কমপ্লেক্স ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের চরিত্র গঠন, দ্বীনি শিক্ষা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক কর্মসূচিতে অবদান রাখার উদ্দেশ্যে নিবেদিত।
এই মসজিদটি হতে যাচ্ছে আব্বাসীয় এবং ফাতিমীয় শাসনামলের নির্মাণশৈলীসহ আধুনিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। এই মসজিদটিতে জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক সুউচ্চ মিনার যেমন থাকছে, তেমনি প্রাকৃতিক পানি ও আলো ব্যবহার করে সৃষ্টি করা হচ্ছে শান্তিময় সুশীতল পরিবেশ। যা অচিরেই জ্যামিতিক নকশাসহ আরবি ক্যালিগ্রাফি এবং আধুনিক শিল্পকর্মে সমৃদ্ধ প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব ধারণা এবং সৃজনশীল স্থাপত্য মিলে নতুন আঙ্গিকে বিস্ময়কর স্থাপত্য শিল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য :
ইবাদত:- এই মসজিদটি শুধু নামাজ আদায়ের মতো ইবাদতের স্থান হিসেবে নয় বরং সমাজের সর্বমুখী কল্যাণকর কার্যক্রমের কেন্দ্র হতে চলেছে। জামায়াতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও জুমার খুতবা ও নামাজ, জানাজা, ইতিকাফ ও বিশেষ ইবাদতসহ প্রাকৃতিক আপদকালে পবিত্র ঈদের নামাজ কায়েমের ব্যবস্থা থাকছে।
ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ:- ইসলামী শিক্ষা এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে মানবীয় জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার মানসে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগারের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। যেখানে থাকবে মাতৃভাষা সহ অন্যান্য ভাষায় অনুবাদকৃত পবিত্র কোরআন শরিফ, বিভিন্ন তাফসির, হাদিস গ্রন্থ যেমন- বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি সহ ফিকহের বই। একই সাথে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন যোগ্য আধুনিক জ্ঞান চর্চায় সহায়ক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, দর্শন এবং সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন বই। পাঠ ও গবেষণার সুবিধার্থে বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলাদা সেকশনে বইগুলো সাজানো থাকবে। এই মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রশস্ত পাঠাগারের হল ঘরটিতে থাকবে শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ, যেখানে দিনমান পর্যাপ্ত আলোবাতাস খেলা করবে। একইসাথে বিদ্যোৎসাহীদের জন্য থাকবে আরামদায়কভাবে জ্ঞানচর্চার উপকরণ, যেমন স্বাস্থ্যসম্মত চেয়ার-টেবিল, আধুনিক প্রযুক্তি মাধ্যম, ডিজিটাল বই বা অনলাইন রিসোর্স।
আরো থাকবে – নিয়মিত ইসলামী বিষয়ভিত্তিক পাঠচক্র বা আলোচনার ব্যবস্থাসহ শিশুদের ইসলামী শিক্ষা ও নৈতিকতা শেখানোর উপযোগী সব বই ও শিক্ষামূলক উপকরণ। অর্থাৎ সুষ্ঠ পরিকল্পিত ও সুসজ্জিত পাঠাগারটিকে জ্ঞানার্জনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে।
মিলনমেলা – মুসলিম সমাজের কেন্দ্র এই মসজিদ হবে ইসলামিক মূল্যবোধ ও চিন্তাচেতনার মিলনমেলা। তাই সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় ন্যূনতম অর্থ, শক্তি, সময়, কর্মী ও সম্পদ ব্যবহারের সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে একটি দক্ষ প্রশাসন। যাদের নিরলস সেবা ও নেতৃত্বে এই পবিত্র স্থানের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। নিবেদিত প্রাণ এমনতর সুযোগ্য নেতৃত্বের ব্যবস্থাপনায় শান্তি, ভ্রাতৃত্ব এবং সাম্যের বার্তা প্রচারের জন্য এখানে যেমন ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তেমনি সকল প্রকার ইসলামি আচার অনুষ্ঠান পালন উপযোগী পরিবেশও প্রস্তুত রাখা হবে। যেমন-
ক) সমমর্যাদা ও সম্মানের সাথে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ নামাজ কায়েম ও ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা।
খ) শিশু-কিশোর, যুবকসহ বয়স্কদের উপযোগী আরামদায়ক নিরাপদ প্রার্থনা বা ইবাদতের পরিবেশ।
গ) সমাজের উন্নতিকে প্রাধান্য দিয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে থাকবে ইসলামি শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম, কর্মশালা এবং আলোচনা সভা আয়োজন।
ঘ) মসজিদে যাতায়াত সহজতর ও নিরাপদ রাখার স্বার্থে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি থাকবে হুইল চেয়ার অ্যাক্সেজসহ পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা।
ঙ) নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা অযুর স্থানসহ পৃথক পৃথক শৌচাগার।
এতিমখানা:- সক্ষমতার ভিত্তিতে এতিম শিশুদের জন্য সমাজের অভিজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তিদের নিবীড় তত্বাবধানে পরিচালিত হবে এতিমখানা। সুরক্ষিত ও পরিচ্ছন্ন এই বাসস্থানে দক্ষ ও আদর্শ শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হবে শিক্ষা কার্যক্রম। যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এতিমরা শুধু পাঠ্যশিক্ষায়ই নয়, জীবনের শিক্ষা, শৃঙ্খলা এবং নৈতিক মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত হবে। এ ছাড়াও থাকবে কারিগরি ও জীবনমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা । একইসাথে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। এমনকি তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনারও ব্যবস্থা থাকবে। যা তাদের সুরক্ষিত, শিক্ষিত এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনে সহায়ক হবে।
হেফজখানা:- কোরআনের শিক্ষা শুধু আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের জন্যই নয়, মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানকেও উন্নত করে। সুতরাং কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে কুরআনের আয়াতগুলির নিখুঁত উচ্চারণ ও সঠিকভাবে মুখস্থ করে পবিত্র কোরআনের বিশুদ্ধতা সংরক্ষণ ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে হেফজখানা।
দাতব্য চিকিৎসালয়:- দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যাতে বিনামূল্যে বা নামমাত্র ব্যয়ে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারে সে জন্য প্রতিষ্ঠিত হবে দাতব্য চিকিৎসালয়। এখানে চিকিৎসা সেবা সুষ্ঠভাবে পরিচালনার স্বার্থে রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের জন্যই আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
এখানে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে সেবাদানে আগ্রহী অভিজ্ঞ চিকিৎসক (এ্যালোপেথিক, হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক), নার্স এবং প্যারামেডিক কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কক্ষ ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করা হবে।
মানবতার কক্ষ:- দান, প্রদান ও গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিগণ স্ব-স্ব সম্মান বজায় রেখে যাতে খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দ্বারা মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন সে জন্য একটি সুসজ্জিত “মানবতার কক্ষ” স্থাপন করা হবে।
কমিউনিটি সেন্টার:- ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক কার্যক্রম যেমন স্বাস্থ্য শিবির, ফিটনেস ক্লাশ, মানবিক স্বাস্থ্য সহায়তা কার্যক্রম, বিভিন্ন কর্মশালা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি পরিচালনার সুবিধার্থে কমিউনিটি সেন্টার স্থাপন করা হবে। যা ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষদের একত্রিত করার মাধ্যমে পারস্পরিক বন্ধন সুদৃঢ় করণে অবদান রাখবে।
মুসাফিরখানা:- সুদৃঢ় নিরাপত্তাসহ ভ্রমণকারীদের অল্প সময়ের বিশ্রাম ও রাত্রিযাপনের জন্য স্থাপন করা হবে মুসাফিরখানা। যেখানে অভাবী ও দরিদ্র ভ্রমণকারীদের জন্য বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে খাদ্য ও পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকবে।


